22 Dec 2024, 10:59 am

পালস সার্ভের জরিপ ;  অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর আস্থা কমেছে ৮ শতাংশ মানুষের

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক :   অন্তর্বর্তী সরকার যে কাজ করছে, তাতে কেমন প্রচেষ্টা দেখতে পাচ্ছেন? ১০০ নম্বরের মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারকে কত দেবেন- এমন প্রশ্নে ৪০ শতাংশ মানুষ সরকারকে ৮১ থেকে ১০০ নম্বর দিয়েছেন।

৬১ থেকে ৮০ নম্বর দিয়েছেন ২১ শতাংশ, ৪১ থেকে ৬০ নম্বর দিয়েছেন ১৯ শতাংশ। আর ২১ থেকে ৪০ নম্বর দিয়েছেন ৭ শতাংশ মানুষ। সরকারকে শূন্য থেকে ২০ নম্বর দিয়েছেন ১৩ শতাংশ মানুষ।

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর করা প্রথম জরিপে অন্তর্বর্তী সরকারকে ৮১ থেকে ১০০ নম্বর দিয়েছিলেন ৪৮ শতাংশ মানুষ। সেই হিসাবে, সরকারের প্রচেষ্টায় সবচেয়ে আস্থাশীল মানুষের সংখ্যা আগের তুলনায় ৮ শতাংশ কমেছে।

ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) ‘পালস সার্ভের’ দ্বিতীয় ধাপের জরিপের ফলাফলে এমন চিত্র উঠে এসেছে। বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর প্রেস ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশে (পিআইবি) আয়োজিত অনুষ্ঠানে এ জরিপের ফলাফল প্রকাশ করা হয়।

বিআইজিডির আয়োজনে ‘অভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশ: মানুষ কী ভাবছে’ শীর্ষক এ অনুষ্ঠানে প্রতিষ্ঠানটির গবেষণা সহযোগী শেখ আরমান তামিম অনুষ্ঠানে জরিপের ফলাফল তুলে ধরেন।

জরিপে গ্রাম ও শহরের নানা শ্রেণি-পেশার ৪ হাজার ১৫৮ মানুষের মতামত নেওয়া হয়৷ তাদের ৫৩ শতাংশ পুরুষ, ৪৭ শতাংশ নারী। আঞ্চলিক হিসাব অনুযায়ী- ৫১ শতাংশ গ্রামের ও ৪৯ শতাংশ শহুরে।

জরিপে দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি, অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ, নির্বাচন, চলমান সমস্যা, সংস্কার, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন করে মানুষের মতামত জানতে চাওয়া হয়। গত ১৫ থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত সময়ে এ জরিপ চালানো হয়।

এর আগে গত আগস্টের তথ্যের ভিত্তিতে সেপ্টেম্বর মাসে বিআইজিডির ‘পালস সার্ভের’ প্রথম ধাপের ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছিল।

রাজনৈতিক বিবেচনায় দেশ সঠিক পথে : জরিপে প্রশ্ন করা হয়, গত এক মাসের রাজনৈতিক অবস্থা চিন্তা করে আপনার কী মনে হয়, বাংলাদেশ ঠিক পথে নাকি ভুল পথে যাচ্ছে? উত্তরে ৫৬ শতাংশ মানুষ বলেছেন, দেশ ঠিক পথে যাচ্ছে। ৩৪ শতাংশ মানুষ মনে করেন, দেশ ভুল পথে যাচ্ছে। বাকিরা প্রশ্নের উত্তর দেননি। অর্থাৎ, সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ মনে করেন রাজনৈতিক বিবেচনায় দেশ সঠিক পথে।

এর আগে গত আগস্টে বিআইজিডির প্রথম জরিপে ৭১ শতাংশ মানুষ বলেছিলেন, দেশ ঠিক পথে যাচ্ছে। ভুল পথে যাচ্ছে বলেছিলেন ১২ শতাংশ।

অর্থনৈতিক বিবেচনায় ভুল পথে দেশ : একইভাবে গত এক মাসের অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনায় দেশ ঠিক পথে নাকি ভুল পথে যাচ্ছে- এমন প্রশ্নের জবাবে ৪৩ শতাংশ মানুষ বলেছেন, দেশ ঠিক পথে যাচ্ছে। ভুল পথে যাচ্ছে বলে মনে করেন ৫২ শতাংশ মানুষ। বাকি ৫ শতাংশ প্রশ্নের জবাব দেননি। অর্থাৎ, সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ মনে করেন অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনায় দেশ ভুল পথে।

গত আগস্টে এ ক্ষেত্রে বিআইজিডির প্রথম জরিপে ৬০ শতাংশ মানুষ বলেছিলেন, দেশ ঠিক পথে যাচ্ছে, ভুল পথে যাচ্ছে বলেছিলেন ২৭ শতাংশ।

এদিকে, রাজনীতি ও অর্থনীতি মিলিয়ে আশাবাদী ৩৭ শতাংশ মানুষ এবং নিরাশাবাদী ২৯ শতাংশ। বাকিরা হ্যাঁ/না কিছুই বলেননি। আগের জরিপে আশাবাদী ছিলেন ৬৮ শতাংশ এবং নিরাশাবাদী ১৩ শতাংশ।

নির্বাচিত সরকার চায় ৭৯ শতাংশ মানুষ : অন্তর্বর্তী সরকারের চেয়ে নির্বাচিত সরকার দেশ ভালো পরিচালনা করবে কি না, এমন প্রশ্নে ৭৯ শতাংশ উত্তরদাতা নির্বাচিত সরকারের পক্ষে ভোট দিয়েছেন। দ্বিমত প্রকাশ করেছেন ১৫ শতাংশ। বাকিরা চুপ থেকেছেন।

অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ : এ নিয়ে প্রশ্নের উত্তরে ২৪ শতাংশ মানুষ বলেছেন, তিন বছর বা তার বেশি সময় মেয়াদকাল হতে পারে। ১৬ শতাংশ বলেছেন দুই বছর, ১৪ শতাংশ বলেছেন এক বছর, ১৯ শতাংশ মানুষ বলেছেন তিন থেকে ছয় মাস। আর অন্তর্বর্তী সরকারের অবিলম্বে ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়া উচিত বলে মত দিয়েছেন ৫ শতাংশ মানুষ।

দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে না পারাই প্রধান সমস্যা : আপনার মতে এ মুহূর্তে দেশের প্রধান সমস্যা কী, জরিপে এমন প্রশ্নে ৬৭ শতাংশ মানুষ অর্থনৈতিক সমস্যার কথা বলেছেন। বিশেষ করে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, অর্থনৈতিক বা ব্যবসায়িক মন্দার কথা বলেছেন।

৯ শতাংশ রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অসহিষ্ণুতার কথা বলেছেন। আইনশৃঙ্খলার অবনতির কথা বলেছেন ৪ শতাংশ মানুষ। ৩ শতাংশ গণতন্ত্রের অভাব আর ২ শতাংশ নিরাপত্তার অভাবের কথা বলেছেন। সমস্যা নেই বলেছেন ৫ শতাংশ মানুষ। বাকিরা প্রশ্নের উত্তর দেননি।

ভারত ইস্যুতে অন্তর্বর্তী সরকার : অন্তর্বর্তী সরকার ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক ভালোভাবে সামাল দিচ্ছে বলে জরিপে মত দিয়েছেন ৪১ শতাংশ মানুষ। এক্ষেত্রে নেতিবাচক উত্তর দিয়েছেন ২৮ শতাংশ। কিছুই পরিবর্তন হয়নি বলে মনে করেন ২৫ শতাংশ মানুষ।

জরিপের ফল প্রকাশের পর অনুষ্ঠানে প্যানেল ও উন্মুক্ত আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনায় অংশ নেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রেস সচিব শফিকুল আলম, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ফিরদৌস আজিম, পিআইবির মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ, পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক আহমেদ আহসান, বিআইজিডির জ্যেষ্ঠ গবেষণা ফেলো মির্জা এম হাসান, নির্বাহী পরিচালক ইমরান মতিন প্রমুখ।

 

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • Visits Today: 3342
  • Total Visits: 1407332
  • Total Visitors: 4
  • Total Countries: 1675

আজকের বাংলা তারিখ

  • আজ রবিবার, ২২শে ডিসেম্বর, ২০২৪ ইং
  • ৮ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (শীতকাল)
  • ১৯শে জমাদিউস-সানি, ১৪৪৬ হিজরী
  • এখন সময়, সকাল ১০:৫৯

Archives

MonTueWedThuFriSatSun
      1
23242526272829
3031     
15161718192021
293031    
       
  12345
2728     
       
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
31      
  12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930   
       

https://youtu.be/dhqhRb9y018